Header Ads

মূল্যবোধ শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা

মূল্যবোধ শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা

 

শিক্ষক সমাজের চালিকাশক্তি, পথ প্রদর্শক, আলোকবর্তিকা এবং সমাজ উন্নয়নের নির্দেশক । শিক্ষক সমাজের মহানব্যক্তিত্ব, সমাজ বিনির্মাণের কারিগর এবং আলোকিত মানুষ। তার কর্মকান্ডের মাধ্যমেই সমাজের পরবর্তী প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। সুতরাং নীতি বিবর্জিত কোন মানুষ শিক্ষক হতে পারেন না। শিক্ষক হবেন সুন্দর মন ও পবিত্র আত্মার শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী, প্রজ্ঞাধারী আদর্শ মানুষ। শিক্ষক হলেন তিনি যার মাঝে আদর্শ চরিত্রের সুমহান ব্যক্তিত্ব আছে। কারণ সুন্দর মনের সুনিপুণ প্রজন্ম গড়ে তোলাই শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব। তাই শিক্ষাবিদ এফ. ফ্রোয়েবলের ভাষায়”-“সুন্দর, বিশ্বস্ত এবং পবিত্র জীবনের উপলব্ধিই হল শিক্ষা আর শিক্ষক হলেন এ উপলব্ধির পথ প্রদর্শকঅন্যদিকে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী Wheithed এর মতে”- “Teaching is art and teacher is the greatest artist”দার্শনিক রুশোর মতে-সুঅভ্যাস গঠনের নাম শিক্ষা আর শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীর সুঅভ্যাস গঠনের নির্দেশক

কাজেই শিক্ষার্থীর মূল্যবোধ শিক্ষার প্রধান সুমহান ব্যক্তিত্ব হলেন শিক্ষক। তাকে কেন্দ্র করেই সমাজ সংসারে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে মূল্যবোধ শিক্ষার সম্প্রসারণ হবে। এক্ষেত্রে শ্রেণীশিক্ষক তথা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে অবশ্যই যথার্থ দায়িত্ব পালন করে অগ্রসর হতে হবে। কারণ তাকে বাদ দিয়ে এ সুমহান শিক্ষার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। শিক্ষককেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীর মূল্যবোধ শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শিক্ষকের দায়িত্ব তথা ভূমিকাকে নিম্নোক্ত উপায়ে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন-

বৌদ্ধিক মূল্যবোধ জাগ্রতকরণঃ শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাদের মাঝে বৌদ্ধিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, দক্ষতা, প্রজ্ঞা শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োগ হয়। শিক্ষার্থীর শিক্ষকের নির্দেশনায় জ্ঞানের সামগ্রীক চর্চা করে তাদের বৌদ্ধিক বিকাশকে আরো বেশি গতিশীল করতে পারেন। যার মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে চরম মূল্যবোধ জাগ্রত হয়।

উপযুক্ত শিক্ষণেঃ শিক্ষার্থীদের বয়স, যোগ্যতা, মেধাপ্রবণতা, আগ্রহ এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু নির্বাচন করে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য চরম মূল্যবোধ অর্জন করা যায়, এমন সব শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে তাদের শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে মূল্যবোধ শিক্ষার সম্প্রসারণ করতে পারেন। এতে করে প্রাপ্ত শিক্ষা হবে তাদের জন্য উপযুক্ত ।

তত্ত্বীয় জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানের গুরুত্বদানঃ শিক্ষার্থীরা সাধারণত শিক্ষকের নির্দেশনায় কাজ করে থাকে। আজকে যারা শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে তারা জাতির অভিভাবক। কাজেই আজকের শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তত্ত্বীয় জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যেখানে মূল্যবোধ অনুশীলনের অবারিত সুযোগ থাকবে।

সুন্দর জীবনাদর্শের উপস্থাপনঃ মূল্যবোধ শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুন্দর এবং কাঙ্ক্ষিত জীবনাদর্শের উপস্থাপন। এক্ষেত্রে মহৎ মনীষীদের জীবনী কিংবা আদর্শ শিক্ষকের অনুকরণীয় জীবনাদর্শ শ্রেণীশিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। যাদের অনুকরণে শিক্ষার্থীরা চরম মূল্যবোধ আয়ত্ত করতে পারে।

অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধ্যয়নঃ শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্যপুস্তক অধ্যায়নের পাশাপাশি মহৎ মনীষীদের জীবনী অধ্যয়নের জন্যও অনুপ্রেরণা যোগাতে পারেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা মহৎ ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব অধ্যয়ন করে তা থেকে অনুকরণীয় আদর্শগুলো গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে পারেন। এখানে শিক্ষকের নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ।

নৈতিক শিক্ষার অনুশীলনঃ মূল্যবোধ শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষার অনুশীলন। বিদ্যালয়ে, পরিবারে কিংবা সমাজে নৈতিক শিক্ষার অনুশীলনের জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। এতে করে তাদের মাঝে নৈতিক জীবনাদর্শ জাগ্রত হয় ৷

যথার্থ সহপাঠক্রমিক কার্যের অনুশীলনঃ বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি, সম্প্রীতি, সহযোগিতা, নৈতিকতা অনুশীলনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যার মাধ্যমে মূল্যবোধ শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজটি দ্রুত এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষক মুখ্য দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

ভাল কার্যের স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদানঃ শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন কার্যের জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়ে তাদের মধ্য হতে ভাল কার্যের জন্য পুরস্কৃত করে মূল্যবোধ শিক্ষাকে সম্প্রসারণ করতে পারেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা ভাল কার্যের প্রতি উৎসাহিত হয় এবং নিজের জীবনের উপর তার প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হবে।

দায়িত্ব সচেতনতা সৃষ্টিঃ শিক্ষার্থীদের মাঝে দায়িত্ব সচেতনতা সৃষ্টি করেও শিক্ষক মূল্যবোধ শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক মুখ্য কারিগর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ব্যক্তি জীবনে দায়িত্ব সচেতনতাও মূল্যবোধের অংশ। কাজেই এর উপর গুরুত্ব দেয়াও শিক্ষকের কাজ।

নীতবোধের অনুশীলনঃ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যথার্থ নীতিবোধ জাগ্রত করে তাদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে পারেন। এর ফলে আজকের শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন এবং সমাজ সংসারের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয়ে সঠিক কর্মপন্থা নির্বাচন করতে পারে। এতে করে সমাজে মূল্যবোধ শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়ে থাকে।

শিক্ষা ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে আর মূল্যবোধ ব্যক্তির অবারিত আচরণকে সংযত করে। কাজেই এ দুয়ের সমন্বয়েই ব্যক্তি সমাজের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। যার ফলে গৃহ, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র তার প্রয়োজনীয় যোগ্য নাগরিকের সমাহার পেয়ে গর্বিত অবস্থায় পৌঁছে যায়। সকল পর্যায়ের আশা আকাঙ্ক্ষা এতে পরিতৃপ্তিতে ফিরে আসে। সুতরাং নিজের প্রয়োজনে, পরিবারের প্রয়োজনে, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মূল্যবোধ শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মূলত জাতীয় উন্নয়নের তাগিদেই মূল্যবোধ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম হিসেবেই স্বীকৃত। কারণ মূল্যবোধ বিবর্জিত মানবযন্ত্র সমতুল্য যার প্রয়োজনীয়তা সমাজ জীবনে কার্যকরী নয়। তাইতো বলতে হয়-মানুষ তো যন্ত্র নয় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের সম্প্রীতি, আনে স্নেহমমতা এবং ভালবাসা হউক আমাদের সকলের জন্য।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন:

লেখকগবেষক ও স্কাউটারমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষকবায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্সমাস্টার্স) মাদরাসা

মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,

ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.