পধর্মীয় শিক্ষার সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সম্পর্ক
ধর্মীয় শিক্ষার
সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সম্পর্ক
ধর্ম শিক্ষার সাথে নৈতিকতা এবং
মূল্যবোধের সম্পর্ক অতি নিবিড়। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মানুষের আবির্ভাবের পরই ধর্মের
প্রতিফলন হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির পরই তাঁর জন্য ধর্ম তথা জীবন যাপনের
বিধি বিধান প্রদান করেন। তখন হতেই ধর্মের অগ্রযাত্রা। সে হিসেবে ধর্ম হতেই
নৈতিকতার জন্ম। কারণ মানবীয় বোধ হতেই নৈতিকতার উৎপত্তি। কাজেই নৈতিকতা আলাদা কোন
সত্তা বা বিষয় নয়। এটি মূলত ব্যক্তি মানবের বিচারবোধ, ভাল মন্দের অনুভূতি এবং
চেতনা হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। যা মানুষকে ভাল এর দিকে অবিচল থাকার আহ্বান করেছে।
অন্যদিকে ধৰ্মীয় শিক্ষা মানুষকে যুগ যুগ ধরে সত্যের পথে, কল্যাণের পথে এবং কামিয়াবীর
পথে চলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে এবং বিধি বিধান সমেত পথের সন্ধান দিয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলনে সমুজ্জল রাখে। আর নৈতিকতা ও
মূল্যবোধ মানুষকে আরো বেশি কল্যাণকামী করে। এখানে ধর্ম শিক্ষা এবং নৈতিকতার
সম্পর্কের নিবিড়তা কতিপয় দিক নিচে বর্ণনা করা হল-
শিখনের দিক নির্দেশনা: ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা মানুষের কল্যাণের জন্য যথার্থ শিখনের দিক নির্দেশনা দেয়। শিখনকে স্থায়ীকরণ এবং অর্জিত জ্ঞানের প্রতিফলনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা। উভয়ের নিবিড়তায় জনসমাজে শিখন এবং তার প্রকৃতি হয় জনহিতকর।
শিক্ষণ শিখন বিষয়বস্তু নির্বাচন: ধর্মীয় দর্শন এবং নৈতিক শিক্ষার অনুভূতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিক্ষণ শিখন কাজের বস্তুকে আরো বেশি জীবনকেন্দ্রিক করা যায়। যেখানে নৈতিকতার অনুশীলন হতে পারে এবং মূল্যবোধ সম্প্রসারিত হতে পারে।
মূল্যবোধের অনুশীলন: ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষার সমন্বিত প্রভাবে পরিবার ও সমাজে মূল্যবোধের চরম অনুশীলন করা যায়। এতে করে মানুষের মাঝে নৈতিকতা এবং নৈতিক আচরণের প্রতিফলন করা সম্ভব হয়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি সম্প্রসারিত করা যায়।
ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ: ধর্ম মানুষকে সঠিক পথে সত্যের পথে পরিচালিত করে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্ম মানুষকে কল্যাণের পথে ধাবিত করে। ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষার সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে এ জনসমাজে ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ধর্ম দর্শনের প্রতিফলন: সঠিক ধর্ম কখনও মানুষকে বিচ্যুত করেনা। ধর্ম সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। ধর্ম মানুষকে সত্যের পথে, পবিত্রতার পথে, কল্যাণের পথে, স্বর্গের পথে পরিচালিত করে। ধর্মীয় দর্শন মানবিক কল্যাণের কার্যক্রমকে দ্রুততর করে। কাজেই ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের নিবিড়তায় মানুষ আরো বেশি কামিয়াবী হতে পারে।
পবিত্রতার অনুশীলন: ধর্ম শিক্ষা সব সময় জীবাত্মাকে পবিত্রতার অনুশীলন করায়। মানব জনমের স্বার্থকতা বের করে চরমভাবে পবিত্রতার অনুশীলন করে সত্যের প্রতি অবিচল থাকার সুযোগ করে দেয়। এতে করে মানবের মাঝে সত্য এবং সত্যের অনুশীলন করা হয় এবং পূত পবিত্র জীবনের উপলব্ধি জন্মে। মানুষ তখন মূল্যবোধ গর্হিত কোন কাজ করতে অগ্রসর হয় না।
পরকল্যাণের মনোভাব
তৈরিঃ জনগণের
হিত বা পরকল্যাণ মহামানবীয় ব্রত। ধর্ম শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষা ব্যক্তি মানবকে
মহানুভাব করে তোলে। তার উদারতা, আত্মসক্রিয়তা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ এবং
সৌহার্দপূর্ণ আচরণ তাকে আরো বেশি পরকল্যাণে ব্রতকরে তোলে। এতে সমাজ এবং সংসারে
সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়। এখানে ধর্ম শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষা ব্যক্তির জন্য
পাথেয় হয়ে কাজ করে।
নীতিবোধের অনুশীলন: নীতি বা আদর্শের চেতনা সার্বজনীন কল্যাণ নির্ভর করণের ক্ষেত্রে ধর্ম শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষার সমন্বিত প্রভাব রয়েছে। কাজেই এদের উভয়ের সম্পর্কের নিবিড়তায় সমাজে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। সার্বজনীন শান্তি স্থাপিত হয়।
সম্প্রীতির সমাজ গঠন: ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন প্রতিষ্ঠা করা যায় । মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজের পরিসর সম্প্রসারিত করে সম্প্রীতির সমাজ গঠন করা যায় যেখানে কল্যাণের চেতনা থাকবে।
মমত্ববোধের প্রতিফলন: ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ব্যক্তির মাঝে মমত্ববোধ জাগ্রত করে। নৈতিক শিক্ষার প্রভাবে মানুষ সমাজ সংসারে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগী হয় তখন মূল্যবোধ গর্হিত কাজ করতে তার মাঝে মানসিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তার অন্তরাত্মা তখন অনৈতিক কাজ করতে ব্যক্তিকে বাধা দেয়।
সাম্যমৈত্রীর সমাজ গঠন: ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাবে সমাজে সাম্য-মৈত্রী এবং প্রগতির চেতনা প্রতিফলিত হয়। যার প্রভাবে সমাজে পরোক্ষভাবে মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার অনুশীলন হয়। সমাজ হয় কলুষমুক্ত। মানুষে মানুষে মানবতাবোধ সম্প্রসারিত হয়। মানুষ কল্যাণের পথে, সত্যের পথে অবিচল থেকে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কাজেই ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার নিবিড়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমার ঘর, আমার বেহেস্ত। আমাদের সমাজ, আমাদের শান্তির আলয়, আমার দেশ সার্বজনীন সুখ নিবাস। এ চেতনায় আমাদেরকে ঘরে, বাইরে কাঙ্ক্ষিত নৈতিকতার চরম অনুশীলন করতে হবে। ঘর হতে সমাজ, সমাজ হতে স্বদেশ এবং
স্বজাতির মাঝে মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষার আশীর্বাদকে সুপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানবতা বিবর্জিত এ জনসমাজকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। মানবতা বিবর্জিত জনসমাজ কারো জন্যই মঙ্গলময় হতে পারে না। সুখের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আপেক্ষিক। কাজেই নিজের জন্য যা কাঙ্ক্ষিত তা অন্যের জন্য কল্যাণকর হবে এ চেতনাকে পরিশীলিত করতে হবে। মানুষ অভ্যাসের দাস। তাকে সবকিছু সার্বজনীন কল্যাণকর চেতনায় বিচার বিশ্লেষণ করে কার্যসম্পাদনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবনকে ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে। মূল্যবোধ এবং নৈতিক চেতনাকে জীবনের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিগত চেতনায় মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ জীবন থেমে থাকেনা। জীবনের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বেদনা-সুখ-শান্তি-জীবন দিয়েই উপলব্ধি করতে হয়। জীবনের নৈতিকতা জীবন হতেই আসে। জনসমাজের কাঙ্ক্ষিত রূপ হতেই নৈতিকতার অনুশীলন হয়। শিক্ষা, ব্যক্তি, সমাজ এবং জীবনকে পরিশীলিত, শান্তি ও আনন্দঘন করে তোলে। আর নৈতিক শিক্ষা ব্যক্তির জীবনকে আরো বেশি সুষমান্ডিত করে। কাজেই শিক্ষা, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় দর্শনের অনুশীলন আমাদের জীবনের জন্য একান্ত পাথেয় হিসেবে গৃহীত।
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ
শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স) মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,
ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment