Header Ads

সময়ের কাজ সময়মত করতে না পারা-উপায় কী?

সময়ের কাজ সময়মত করতে না পারা-উপায় কী?


আজকের দ্রুতগতির জীবনে কাজের চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অফিস, ঘর, পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনসব মিলিয়ে সময় ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সবার। কিন্তু সীমিত সময়ের মধ্যেই এই চাপ সামলাতে শিখতে হবে, নতুবা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

জীবন ও সময়

জীবন কী? জীবন হলো সময়ের সমষ্টি। তাই সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সময়কে যে যেভাবে ব্যবহার করে তার জীবন সেভাবে গড়ে ওঠে। এর মধ্যেও ছাত্রজীবনে সময় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে সফল ক্যারিয়ার তথা সফল জীবন গড়া সম্ভব হয় না। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, ছাত্রজীবনেই সময়ের অপচয় হয়ে থাকে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভেসে মনের অজান্তেই অনেক তরুণ জড়িয়ে পড়ে অহেতুক এবং অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে। যে সময়টি ক্যারিয়ার সফলতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সে সময় হেলায় হারিয়ে যায়। সে অভ্যাস রয়ে যায় পরেও। সময়ের কাজ যথাসময়ে না করে ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখা ক্যারিয়ারে সফলতা লাভেরও বিরাট অন্তরায়।

সমস্যার কারণ:

1.      অতিরিক্ত কাজের চাপ: কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া।

2.     সময়ের সঠিক ব্যবহার না করা: সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব।

3.    প্রযুক্তি নির্ভরতা: সারাক্ষণ ইমেইল, মেসেজ ও নোটিফিকেশন দেখতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পেছনে পড়ে যায়।

4.      ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্যহীনতা: অফিসের কাজের জন্য ব্যক্তিগত সময় দখল হয়ে যাওয়া।

সময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

সময় সংকটের প্রথম সমাধান হলো সময়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। সময় অপচয় করার জন্য অনেক সময় সংকট দেখা যায়। সাধারণত জীবন ও ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্ধারিত না থাকলে স্রোতে গা ভাসিয়ে অনেকে মূল্যবান সময়ের অপচয় করে ফেলে। এ সময়ের অপচয় রোধ করতে ক্যারিয়ার ও জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সময়ের অপচয় রোধ করা যায়। স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা যেমন প্রতিদিনের কাজের তালিকা, সাপ্তাহিক কাজের তালিকা, মাসিক কাজের তালিকা ইত্যাদি তৈরি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পাদন করার মাধ্যমে সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এ ধরনের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের সময় বিনোদন ও বিশ্রামের জন্যও প্রয়োজনীয় সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুস্থ শরীর ও মন প্রয়োজন। আর তা নিশ্চিত করতে পারে সুস্থ বিনোদন এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম।

 অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ

সময় সংকটের আরেকটি সমাধান হলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করা। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারার ভিত্তিটাই হলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ নির্বাচন করা ও সম্পন্ন করা। স্থান, কাল, পাত্র এবং আগ্রহভেদে অগ্রাধিকার ভিন্নতর হতে পারে। কোন কাজ কখন করবেন তা ঠিক করার আগে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথমে করতে হবে, এমন কাজ তালিকার প্রথমে রাখুন। এভাবে ক্রমান্বয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর তালিকা করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করুন।

লোকবল নিয়োগ

সময় সংকটের শেষ সমাধান হলো, লোকবল নিয়োগ করা। যারা সময়ের অপচয় রোধ করে সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার পরও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারছেন না তারা এই পদ্ধতিতে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নিতে পারবেন। মানুষের ব্যস্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাগতিক সাফল্যের একটি যোগাযোগ আছে। ফলে সফল ব্যক্তিরা চাইলেই নিজে না করলেও চলে এমন কাজ করার জন্য লোকবল নিয়োগ দেন। আপনার আর্থিক সঙ্গতি সহায়তা করলে আপনি এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।

কীভাবে সামলাবেন?

1.      টুডু লিস্ট তৈরি করুন: প্রতিদিনের কাজের তালিকা করুন এবং সময়মতো তা সম্পন্ন করুন।

2.     সময়সীমা নির্ধারণ করুন: প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নিন। এতে ফোকাস ধরে রাখা সহজ হবে।

3.    'না' বলতে শিখুন: সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যা সম্ভব নয়, তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করুন।

4.      ডিজিটাল ডিটক্স: প্রয়োজন ছাড়া ফোন বা সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন।

5.     স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং নিয়মিত ব্যায়াম সময় ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।

6.     বিরতি নিন: দীর্ঘ সময় কাজ করার বদলে মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নিন। এতে মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

7.     সহায়তা নিন: কাজ ভাগাভাগি করুন বা প্রয়োজনে সহকর্মীদের সাহায্য নিন।

সময় ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র দক্ষতার বিষয় নয়, এটি অভ্যাসেরও বিষয়। কাজের চাপ যতই বাড়ুক না কেন, যদি পরিকল্পনা ও ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, তাহলে জীবন অনেক সহজ হবে। সময়ের সঠিক ব্যবহারই সাফল্যের চাবিকাঠি।

 প্রতিবেদনটি লিখেছেন:

লেখকগবেষক ও স্কাউটারমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষকবায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্সমাস্টার্স) মাদরাসা

মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,

ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.