Header Ads

শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে স্কাউটিং

শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে স্কাউটিং


স্কাউটিং শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং মানসিক দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে। স্কাউটিং শুধু মানসিক বিকাশের জন্যই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি তাদের জীবনে আত্মনির্ভরশীল, দায়িত্বশীল এবং সমাজের প্রতি সদয় ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিচে এর কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো:

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি স্কাউটিং-এর কার্যক্রম যেমন দলে কাজ করা, প্রকৃতিতে অভিযানে অংশগ্রহণ করা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তারা বুঝতে পারে যে তারা কঠিন কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

নেতৃত্ব গুণাবলি উন্নয়নঃ স্কাউটিং-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বিভিন্ন দলে নেতৃত্ব দিতে শিখে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।

সমাজবোধের বিকাশঃ স্কাউটিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, দলবদ্ধভাবে কাজ করা এবং অন্যদের সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি করে। এটি তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মনোযোগ ও ধৈর্য বৃদ্ধি ঃস্কাউটিং কার্যক্রম যেমন শারীরিক প্রশিক্ষণ, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করে।

চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতাঃ স্কাউটিং-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন ও অজানা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শেখে। এটি তাদের সমস্যার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিঃ স্কাউটিং শিক্ষা ভালোবাসা, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলা এবং নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গৌরব আর অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম স্কাউট দেশ। তবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যাত্রা শুরু অনেক আগে। ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিভেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল এই যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা করেন।  স্কাউট আন্দোলন এর প্রবর্তক রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল (সংক্ষেপে বিপি) ১৮৫৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী লন্ডনে জন্ম গ্রহন করেন। মৃত্যু ১৯৪১ সালের ০৮ জানুয়ারী কেনিয়ার নাইরোবেরিতে ৷

বাংলাদেশের স্কাউটিং: ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশে বয় স্কাউট সমিতি গঠিত হয়প্রথম জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন পিয়ার আলী নাজির। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্টপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ স্কাউটকে সরকারী স্বীকৃতি দেয়া হয়১৯৭৪ সালে ১ জুন বিশ্ব স্কাউট সংস্থা বাংলাদেশ স্কাউটকে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫ নং সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ গার্ল-ইন-স্কাউটিং প্রবর্তিত হয়বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটস ১৩টি অঞ্চলে বিভক্ত। জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষন কেন্দ্র গাজীপুরের মৌচাকে অবস্থিত। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ স্কাউটস এর চীফস্কাউট।

স্কাউটরা সব সময় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। একজন মানবিক মানুষের স্বাদ পেতে হলে অন্যের বিপদে এগিয়ে যেতে হবে। তাই দেশের প্রতিটি দুর্যোগে স্কাউট ও রোভার স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বন্যায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজ, অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার অভিযান, মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্কাউটদের সাড়া দিতে দেখা যায় শুধু দেশে নয়, প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে। যা একদিকে যেমন ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। একই সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠতে সহায়তা করে। নিজের প্রতি কর্তব্য পালন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালন এবং অপরের প্রতি কর্তব্য পালন এই তিন মূল মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্কাউটরা। স্কাউটদের মূলমন্ত্র হচ্ছে কাব স্কাউট যথাসাধ্য চেষ্ট করা, স্কাউট সদা প্রস্তুত এবং রোভার স্কাউট- সেবা। স্কাউটদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী, সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে স্কাউটরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

স্কাউটিংয়ের শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাজে লাগানো গেলে জাতীয় উন্নয়ন গতিশীল হবে। স্কাউটিং কর্মকাণ্ড নতুন প্রজন্মকে আধুনিক, গতিশীল ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। স্কাউটিং সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। আগামী দিনে স্কাউটরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। বিভিন্ন সমাজ সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়, ভবন ধস ও অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।

 স্কাউটিং কিঃ স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক নির্ধারিত উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও পদ্ধতিতে শিশু, কিশোর ও যুবকদের জন্য স্কাউটিং একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে স্কাউটিং সকলের জন্য উম্মুক্ত। স্কাউটিং হলো শিশু কিশোর ও যুবদের পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সৎ চরিত্রবান, আত্ননির্ভরশীল, ধর্মভীরু ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে সৎ আদর্শ দক্ষ, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত বিশ্বজোড়া এক মহান আন্দোলন।

 স্কাউট প্রতিজ্ঞাঃ আমি আমার আত্নমর্যাদার উপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, সর্বদা অপরকে সাহায্যে করতে, স্কাউট আইন মেনে চলতে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞাঃ আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করতে, কাব স্কাউট আইন মেনে চলতে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

 স্কাউট আইনঃ সাতটি: .স্কাউট আত্নমর্যাদায় বিশ্বাসী, . স্কাউট সকলের বন্ধু, .স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত, .স্কাউট জীবের প্রতি সদয়, .স্কাউট সদা প্রফুল্ল, .স্কাউট মিতব্যয়ী, .স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল। কাব স্কাউট আইনঃ দুইটি: . বড়দের কথা মেনে চলা ২.নিজেদের খেয়ালে কিছু না করা ৷

 স্কাউট মটো: কাব স্কাউট মটো: “যথাসাধ্য চেষ্টা করা”, স্কাউট মটো: “সদা প্রস্তুত”, রোভার স্কাউট মটো: “সেবা”। স্কাউট শ্লোগান: প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা”।

 স্কাউট পদ্ধতিঃ স্কাউট পদ্ধতি একটি ধারাবাহিক স্ব-শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া যার উপাদানগুলো হচ্ছে: . প্রতিজ্ঞা ও আইনের চর্চা এবং তার প্রতিফলন,  . হাতে কলমে শিক্ষন ৩. ছোট ছোট দলের সদস্য হিসেবে কাজ করা (যেমন: ষষ্ঠক/উপদল পদ্ধতি) . ক্রমোন্নতিশীল ও উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম (ব্যাজ পদ্ধতি)  .বয়স্ক নেতার সহায়তা ৬. প্রকৃতি পর্যবেক্ষন ৭. প্রতিকী কাঠামো সকল ধরণের স্কাউট, . জনসম্পৃক্ততা।

 বয়স ভিত্তিক স্তর বিন্যাস:কাব স্কাউট: ৭ বছর থেকে ১১ বছর, স্কাউট ১১ বছর থেকে ১৮ বছর, রোভার ১৭ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত, (রেলওবা, বিমান ও অনূরুপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবিদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত)

স্কাউট চিহ্নের তাৎপর্য: ডান হাতের কব্জি থেকে হাতের অগ্রভাগ পর্যন্ত অংশকে সোনালী বন্ধন বা “Golden Tia” বলে। হাতের মাঝের তিনটি আঙ্গুল দ্বারা প্রতিজ্ঞার তিনটি অংশকে বোঝায়বুড়ো আঙ্গুলের বন্ধনের ফলে সৃষ্ট বৃত্ত সারা পৃথিবীতে স্কাউটদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধনকে বোঝায়।

 পঞ্চশিলাঃ যার থেকে বিরত থাকা ও পরিহার করা জরুরী: . জুয়া, . নেশা, . যৌন আকাঙ্খা, . শটতা,  .নাস্তিকতা

 ধর্মের সাথে স্কাউটিং এর সম্পর্ক: ধর্মের প্রতি আনুগত্য স্কাউটিংয়ের মূলনীতির প্রথম ও প্রধান অংশ। স্কাউট প্রতিজ্ঞা ও আইন স্কাউট আন্দোলনের মূলভিত্তি। প্রতিজ্ঞতার প্রথম অংশই হল আল্লাহ শ্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন

 আপনার সন্তান কেন স্কাউট হবে? : স্কাউটিং নিয়মানুবর্তী, সময়ানুবর্তী হতে সাহায্য করে। স্কাউটিং চরিত্র গঠনে সহায়ক ৷ স্কাউটিং শরীর সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। স্কাউটিং সৎ ও সত্যবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয়। স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে চৌকোষ করে গড়ে তুলে। স্কাউটিং বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বন্ধত্বের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উদারতা শিক্ষা দেয় । স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলে। স্কাউটিং নিয়ম ও ধৈর্য শিক্ষা দেয়। স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে কর্মঠ করে গড়ে তুলেস্কাউটিং শ্রমের মর্যাদা শেখায়। স্কাউটিং সমাজের উপকারী নাগরিক সৃষ্টি করে। স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে পরোপকারী ও জনসেবায় উদ্ধুদ্ধ করে স্কাউটিং ছেলে-মেয়েকে অবসর সময়ে গঠন মুলক কাজে যোগ দিয়ে মূল্য বোধের অবক্ষয়রোধে সাহায্য করে।

স্কাউটিং শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীলতা, নেতৃত্বগুণ, ও আত্ম-নির্ভরতা শিখতে পারে। স্কাউটিংয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে তারা নিজস্ব দক্ষতা ও স্বতন্ত্রতা আবিষ্কার করতে পারে যা তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে ওঠে, যা তাদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন:
লেখক, গবেষক ও স্কাউটারমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষকবায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্সমাস্টার্স) মাদরাসা

মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,

ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.