উচ্চারণ শুদ্ধ করার কৌশল
উচ্চারণ শুদ্ধ করার কৌশল
উচ্চারণ শুদ্ধ করা শুধুমাত্র ভাষার দক্ষতার উন্নতি করে না, এটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও সহায়ক। বিশেষ করে বিদেশে পড়াশোনা বা পেশাজীবনে উচ্চারণ শুদ্ধ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষের কণ্ঠের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। ঠিক তেমনি প্রতিটি ভাষার ক্ষেত্রেও নিজস্ব উচ্চারণভঙ্গি রয়েছে। প্রেজেন্টেশন-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে ভালো করার জন্য সেই উচ্চারণভঙ্গি শুদ্ধভাবে শেখা খুব জরুরি। এখানে কিছু কার্যকর কৌশল দেয়া হলো যা উচ্চারণ শুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
শব্দভাণ্ডার বিস্তৃত করা: উচ্চারণ শুদ্ধ করার প্রথম ধাপ হলো শব্দভাণ্ডার বিস্তৃত করা। প্রতিদিন নতুন
নতুন শব্দ শিখুন এবং সেগুলোর সঠিক উচ্চারণ জানার চেষ্টা করুন।
ফোনেটিক্স শেখা:
ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব বা ফোনেটিক্স শেখা অত্যন্ত কার্যকর। ফোনেটিক অক্ষরগুলি শিখে
সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
উচ্চারণ শেখার পদ্ধতিগত উপায়ঃ ক) ধ্বনি বিশ্লেষণ: স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সঠিক ধ্বনিরূপ। খ) উচ্চারণের
বিজ্ঞান: মুখ, জিহ্বা ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ভূমিকা। গ) শব্দের বিভক্তি ও জোর:
বাক্যে শব্দের সঠিক অবস্থান ও জোর প্রয়োগ।
আয়না অভ্যাস: আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে উচ্চারণ অনুশীলন করুন। এতে মুখের অবস্থান ও মুখভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন হওয়া
যায়, যা উচ্চারণ শুদ্ধ করতে সহায়ক।
বড় আওয়াজে পড়া: পড়ার সময়
উচ্চস্বরে পড়ুন। এতে আপনার উচ্চারণের ভুলগুলি সহজে ধরতে পারবেন এবং সেগুলি শুদ্ধ
করতে পারবেন।
শিক্ষকের সহায়তা:
যদি সম্ভব হয়, একজন ভাষা শিক্ষকের সহায়তা নিন। একজন দক্ষ শিক্ষক আপনার উচ্চারণের
ভুলগুলি চিহ্নিত করতে এবং সেগুলি শুদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারবেন।
উচ্চারণ সংশোধনে প্রযুক্তির ব্যবহারঃ মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন কোর্সের সাহায্য। গুগল
টেক্সট-টু-স্পিচ বা অনুরূপ প্রযুক্তি ব্যবহার। ভাষা শেখার সফটওয়্যার (যেমন:
Duolingo, Busuu)।
কণ্ঠের যত্ন নিনঃ আমরা স্বরযন্ত্রের সাহায্যে কথা
বলি। আর ভাষার একেকটি ধ্বনি ষড়যন্ত্রের একেক অংশ থেকে উচ্চারিত হয়। ধ্বনির উচ্চারণ
ঠিক করার জন্য আগে কণ্ঠের যত্ন নিন। এ ক্ষেত্রে কারও যদি জিহ্বার জড়তা থাকে, তাহলে জিহ্বার ব্যায়াম করতে হবে। পাশাপাশি শ্বাসের ব্যায়াম
করাও খুব জরুরি। এ বিষয়ে ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখেও অনুশীলন করতে পারেন। আর খেয়াল
রাখবেন, কথা বলার সময় দৃঢ় ও স্পষ্ট কণ্ঠে প্রতিটি শব্দ
উচ্চারণ করতে হবে। এ ছাড়া আবৃত্তি অনুশীলনের আগে গরম পানি দিয়ে কুলকুচা করতে
পারেন।
ভাষা স্পষ্ট রাখুনঃ কথা বলার ভাষা যা-ই হোক না কেন, স্পষ্ট স্বরে কথা
বলতে হবে। দুই বা ততোধিক ভাষা মিলিয়ে বলা কথা শুনতে সুন্দর লাগে না। এ ক্ষেত্রে
বাংলা ভাষায় কথা বলার সময় শুদ্ধভাবে কেবল বাংলাতেই কথা বলার চেষ্টা করুন। আবার
ইংরেজি ভাষা বলার সময় পুরোপুরি ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করুন। কথা বলার সময় কোনো
জড়তা থাকতেই পারে। তবে সেই জড়তা কাটাতে কথা শুরুর আগে বলতে হবে। কথা বলা শুরু করার
পর অপ্রয়োজনীয় বিরতি নিলে কথা শ্রুতিমধুর শোনায় না। তাই অপ্রয়োজনীয় বিরতি নেওয়া
হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখুন। অনেকের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার
অভ্যাস থাকে। আঞ্চলিকতা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু সবার বুঝতে পারার মতো করে স্পষ্ট
উচ্চারণে কথা বলতে হবে।
উচ্চারণ শুনতে হবেঃ উচ্চারণ শুদ্ধ ও সুন্দর করার
প্রথম ধাপ হচ্ছে শোনা;
অর্থাৎ উচ্চারণ শুনে তা শিখতে হবে। মনে রাখবেন, ভাষার প্রতিটি বর্ণ নির্দিষ্ট ধ্বনির মাধ্যমে উচ্চারিত হয়, আর প্রতিটি বর্ণ কীভাবে আলাদা আলাদা ধ্বনিতে উচ্চারিত হয়; তা আয়ত্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক, আবৃত্তিকারদের দিয়ে শুনাতে পারেন। শোনার সময় তাঁরা কীভাবে উচ্চারণ করছেন,
সেটি বোঝার চেষ্টা করুন। কথা শুনতে শুনতে তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে
বলার চেষ্টা করুন। কিছুদিন এভাবে অনুশীলনের পর ধ্বনির সঠিক উচ্চারণ আয়ত্তে আসবে।
অনুকরণ করুনঃ কাটাতে কথা শুরুর আগে চিন্তা করে
সুন্দর উচ্চারণের কথা শুনলেও, অনেক সময় ঠিক একইভাবে বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে
কণ্ঠশিল্পীরা কীভাবে কথা বলছেন, তা অনুকরণ করতে পারেন।
পাশাপাশি কথা বলার সময় তাঁদের কণ্ঠের আওয়াজ ও মুখভঙ্গি ভালোভাবে খেয়াল করবেন। শুধু
খেয়াল করলেই হবে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার সেই ভঙ্গিতে কথা বলার অনুশীলন
করতে হবে। অনুকরণ করে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে উচ্চারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। তখন
নিজস্ব ভঙ্গিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারবেন। আদতে আয়নার সামনে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে
কথা বলার সময় নিজের ভঙ্গি দেখা ও প্রয়োজনে তা উন্নত করা যায়, তাই কথা বলার সময় আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাবে।
অনুশীলন করাঃ দক্ষতা বাড়ানোর অনুশীলনের বিকল্প
নেই। তাই শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার জন্য আপনাকে বারবার অনুশীলন করতে হবে। কণ্ঠ ও
আবৃত্তিশিল্পীদের কথা বারবার শুনতে হবে। শোনার পাশাপাশি সেই ভঙ্গিতে কথা বলার
চেষ্টা করতে হবে। আর প্রথমেই উচ্চারণ শুদ্ধ না হলে মন খারাপ করার দরকার নেই; বরং হার না মেনে
বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
শিশুদের জন্য উচ্চারণ শিক্ষার কৌশলঃ সহজ গান, কবিতা এবং গল্পের মাধ্যমে উচ্চারণ শেখানো। মজার
খেলাধুলার মাধ্যমে ধ্বনিগত সচেতনতা সৃষ্টি।
কার্যকর উচ্চারণ চর্চার জন্য টিপসঃ ধীরে কথা বলার অভ্যাস। একটানা অনুশীলনের পরিবর্তে
প্রতিদিন কম সময় অনুশীলন। নিজেকে ভুল করার সুযোগ দেওয়া এবং ধীরে ধীরে উন্নতি করা।
উচ্চারণ শুদ্ধ করতে শব্দভাণ্ডার বিস্তৃত করা, নেটিভ স্পিকারদের অনুকরণ,
ফোনেটিক্স শেখা, আয়নার সামনে অনুশীলন, উচ্চস্বরে পড়া, ভাষা শিক্ষকের সহায়তা নেওয়া,
অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার এবং নিয়মিত চর্চা করা অত্যন্ত কার্যকর। এসব কৌশল অনুসরণ
করে ভাষার উচ্চারণ শুদ্ধ করা সহজতর হবে এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জন
করা সম্ভব হবে।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন:
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স)
মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭, ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment