Header Ads

পত্রিকা পাঠ জরুরী কেন ছাত্রজীবন থেকে?

পত্রিকা পাঠ জরুরী কেন ছাত্রজীবন থেকে?

 ছাত্রজীবন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেন। এই সময়ে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা শিক্ষার্থীদের বহুমুখী উপকারে আসতে পারে। পত্রিকা পড়া শুধু যে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে তা নয়, বরং ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাধারাকে আরও উন্নত করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের জন্য যতটুকু পড়া দরকার তার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলছে তারা। কেননা, আমাদের সমাজে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ভিত্তিতেই একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। মনে করা হয় যার যত ভালো রেজাল্ট সে তত মেধাবী। পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীটিও যে মেধাবী হতে পারে তা মানতে নারাজ অনেকে। পরীক্ষার ফলাফলই যেহেতু বলে দেয় কে ভালো ছাত্র বা ছাত্রী, সেহেতু বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লিখে দিয়ে একটি ভালো রেজাল্ট করতে পারলেই মুক্তি পায় তারা! এখানে কেন ছাত্রজীবন থেকে পত্রিকা পড়া গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বর্তমান ঘটনার সঙ্গে পরিচিতি: পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বর্তমান ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি তাদের সাম্প্রতিক বিষয়ে জ্ঞানের ভাণ্ডারকে বিস্তৃত করে এবং বিশ্ব সম্পর্কে আরও সজাগ করে।

ভাষা দক্ষতা উন্নয়ন: নিয়মিত পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে ভাষার দক্ষতা উন্নয়ন হয়। নতুন নতুন শব্দ শিখা, সঠিক বাক্য গঠন এবং লেখার শৈলী শেখা সম্ভব হয়।

মতামত গঠন ও বিশ্লেষণ: পত্রিকা পড়া শিক্ষার্থীদের মতামত গঠন ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা উন্নত করে। তারা বিভিন্ন মতামত ও বিশ্লেষণ পড়ে তাদের নিজের মতামত গঠন করতে পারেন।

সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি: পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। এটি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষায় সহায়ক হয় যেখানে সাধারণ জ্ঞান প্রয়োজন।

পাঠ্যক্রমের বাহিরে জ্ঞান: শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। এটি তাদের চিন্তাধারাকে আরও প্রসারিত করে।

সৃজনশীলতা ও লেখার দক্ষতা: নিয়মিত পত্রিকা পড়া সৃজনশীলতা এবং লেখার দক্ষতাকে উন্নত করে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরণের প্রবন্ধ ও রিপোর্ট লেখা শিখতে পারেন।

নিজেকে সমৃদ্ধ করাঃ একজন তরুণ পাঠক পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারছে। আবার অনেক তরুণ আছে, যারা পত্রিকা কেন পড়তে হবে, কীভাবে পড়তে হবে, সে সম্পর্কে অজ্ঞ। অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। অনলাইনে পত্রিকা পড়া গেলেও অভ্যাস না থাকায় তাও হয়ে ওঠে না অনেকের।

ক্যারিয়ারের খোঁজখবর পেতেঃ সংবাদপত্রে সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ফলে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা অনুযায়ী সেসব চাকরিতে আবেদন করা যায়। কবে, কোথায়, কোন সময় পরীক্ষাএসব জানা যায়। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, বৃত্তি, কোর্স প্রভৃতির খোঁজখবর ও পরামর্শমূলক লেখা পাওয়া যায়। ফলে যে শিক্ষার্থী দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করতে যাবে, সেও পত্রিকা পড়ার ফলে উপকৃত হবে।

 

উদ্যোক্তা হতে চাইলেঃ দেশের অনেক সাহসী শিক্ষার্থী আছেন যারা গতানুগতিক চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরি দিতে চান। তাদের জন্যও পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হয়। নানা বাধা অতিক্রম করে যারা উদ্যোক্তা হয়ে সফল হয়েছেন, তাপদর নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হয়। সেসব ফিচার পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। কী ধরনের বাধা অতিক্রম করতে হবে, সে বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ের নিত্যনতুন ধারণা পায়। বিভিন্ন আপডেট তথ্যও জানতে পারে। ফলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুতি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জ্ঞান বৃদ্ধি: পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি এবং নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারে। এটি তাদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে।

বিষয়ভিত্তিক গভীর ধারণা: পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালেখি থাকেরাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, খেলাধুলা ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দসই বিষয় নিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

ছাত্রজীবন থেকে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের জ্ঞান, ভাষা দক্ষতা, সাধারণ জ্ঞান এবং চিন্তাধারাকে উন্নত করে। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নিজেকে সর্বদা আপডেট রাখা। একজন শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত পত্রিকায় চোখ বোলায় তাহলে সে একজন সচেতন নাগরিক হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত বাসায় প্রতিদিন কমপক্ষে একটি হলেও পত্রিকা রাখা। বাসায় পত্রিকা রাখা হলে পরিবারের সদস্যরা একবার হলেও এটি হাতে নেয়। কেউ পত্রিকায় ছাপানো রঙিন ছবি দেখে আনন্দ লাভ করে।

 লেখক, গবেষক ও স্কাউটারমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষকবায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্সমাস্টার্স) মাদরাসা

মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,

ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.