সিভি লেখার সহজ কৌশল
বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক
চাকরির বাজারে একধাপ এগিয়ে থাকার জন্য প্রয়োজন একটি প্রফেশনাল,
আকর্ষণীয় এবং কার্যকর সিভি। চাকরি প্রার্থীর স্কিল, অভিজ্ঞতা, এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন তুলে ধরতে
সিভির গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি জানেন কি, প্রথম নজরে সিভি দেখে
প্রায় ৭ সেকেন্ডের মধ্যে নিয়োগকর্তা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন পরবর্তী ধাপে যাবেন কি
না? তাই নিজের দক্ষতা এবং যোগ্যতাকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে
সঠিক কৌশল প্রয়োজন। চাকরিদাতার কাছে চাকরিপ্রার্থীর প্রথম পরিচয় ঘটে সিভি বা
জীবনবৃত্তান্তের মাধ্যমে। সঠিকভাবে লেখা সিভি একজন প্রার্থীকে চাকরির দৌড়ে এগিয়ে
রাখে। প্রাসঙ্গিক সিভি প্রস্তুত করতে নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
বিশাল প্যারাগ্রাফের বদলে সংক্ষেপে মূলকথা লিখুন,
সম্ভব হলে বুলেট পয়েন্টে। বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন পূর্বের জব অভিজ্ঞতার কথা বলার সময়। আগের চাকরির দায়িত্বগুলো পয়েন্ট করে করে লিখুন, গদ্য
করে লেখার বদলে। এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠার ট্রানজিশন যাতে মসৃণ হয়, সেদিকে
খেয়াল রাখুন। কোনো পৃষ্ঠায় যে পয়েন্ট
শুরু করেছেন, তা সেখানেই শেষ করুন। অর্ধেক লিখে বাকি অর্ধেকের জন্য পরের পৃষ্ঠায় যাবেন না। এগুলো দৃষ্টিকটু। আর ভুলেও বানান ভুল করা যাবে না। একটা বানান ভুল, আর আপনার
চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে শতের কাছাকাছি চলে যাওয়া!
মনে রাখবেন, সিভির ফরম্যাট ভালো হলেই তা পড়ে দেখার চান্স বাড়ে।
সেই সাথে বাড়ে ইন্টারভিউ কলে ডাক পাবার সম্ভাবনাও। তাই CV নিজ ডিভাইসে সেইভ করুন ডক ফাইল
হিসেবে। কারণ প্রতি সেমিস্টারে (অথবা
চাকরিজীবীদের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে কিছুদিন পরপর) তো আপডেট হবে
সেটি। ফাইলের
নামটা ঠিক করে লিখুন। আর হ্যাঁ, সিভিটা তাদের অবশ্যই পাঠাবেন পিডিএফ হিসেবে।
পরিষ্কার
ও সুশৃঙ্খল বিন্যাস ব্যবহার করুনঃ ফন্ট:
সহজ এবং পঠনযোগ্য ফন্ট (যেমন Arial,
Calibri, Times New Roman) ব্যবহার করুন। ফন্ট
সাইজ: শিরোনামের জন্য ১৪-১৬ এবং সাধারণ টেক্সটের জন্য ১১-১২। বুলেট পয়েন্ট:
তথ্য সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন।
সংক্ষেপ
এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য দিনঃ সিভি-র দৈর্ঘ্য
সাধারণত ১-২ পৃষ্ঠা হওয়া উচিত। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য এড়িয়ে চলুন।
কাস্টমাইজ
করুনঃ প্রতিটি চাকরির জন্য সিভি-কে সামান্য
কাস্টমাইজ করুন। জব বর্ণনার সঙ্গে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা মিলিয়ে উপস্থাপন করুন।
কীওয়ার্ড
ব্যবহার করুনঃ চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে থাকা
গুরুত্বপূর্ণ শব্দ এবং বাক্যাংশ সিভি-তে অন্তর্ভুক্ত করুন।
পরীক্ষা
ও সম্পাদনাঃ বানান ও ব্যাকরণ ভুল পরীক্ষা করুন। অভিজ্ঞ
কারও কাছে সিভি পর্যালোচনা করান।
প্রাসঙ্গিক
ডকুমেন্ট যুক্ত করুন (যদি প্রয়োজন হয়): কভার লেটার,
রেফারেন্স এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রয়োজনে সিভি-র সঙ্গে যুক্ত করুন।
ছবি হোক
প্রফেশনালঃ সিভি কোনো ইনফরমাল বিষয় নয়। সিভিতে
ফরমাল গেটআপে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যবহার করতে হবে। ব্যাকগ্রাউন্ড নীল বা
সাদা হলে ভালো। সেলফি বা ভ্রমণের সময় তোলা ছবি সিভিতে দেওয়া একেবারে বেমানান।
যোগাযোগের
বিস্তারিত দেওয়াঃ সিভির শীর্ষে নিজের পুরো
নাম বড় ফন্টে বোল্ড করে লিখুন। এরপর যথাক্রমে প্রফেশনাল টাইটেল, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, লিংকডইন
প্রোফাইল লিংক এবং ঠিকানা উল্লেখ করুন।
গোছানো
অবজেকটিভঃ ক্যারিয়ার অবজেকটিভ বা সামারি সিভির
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আবেদন করা পদের সঙ্গে সম্পর্কিতভাবে এটি সংক্ষেপে
লিখুন। একবার সিভি তৈরি করে সব প্রতিষ্ঠানে সেটি পাঠানো উচিত নয়। অবজেকটিভ লেখার
সময় আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। তবে এটি ১০০
শব্দের মধ্যে রাখুন।
পেশাগত
অভিজ্ঞতা তুলে ধরুনঃ আবেদন করা পদের
সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আগের কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন। প্রতিষ্ঠানের নাম, কাজের মেয়াদকাল
এবং পদের নাম পরিষ্কারভাবে লিখুন। সর্বশেষ কাজ করা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রথম
কাজ করা প্রতিষ্ঠানের নাম পর্যায়ক্রমে দিন।
স্কিলঃ সিভিতে চাকরির পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক স্কিলগুলো দিতে
হবে। একবিংশ শতকে এসে নিশ্চয়ই এই স্কিল বিষয়টার
গুরুত্ব নতুন করে বলে দিতে হবে না। তবে এই স্কিল সেকশনে যা মাথায় রাখতে হবে,
তা হলো রিলেভেন্স বা প্রাসঙ্গিকতা। যেখানে অ্যাপ্লাই করছেন সেখানকার
জবের সাথে যে দক্ষতাটা যায়, খাপ খায় সেটিই দিন।
শিক্ষাগত
যোগ্যতা উল্লেখ করাঃ শিক্ষাগত
যোগ্যতা পদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরুন। সর্বশেষ ডিগ্রি থেকে শুরু করে
পর্যায়ক্রমে আগের ডিগ্রিগুলোর নাম, সাল, প্রতিষ্ঠান ও
ফলাফল উল্লেখ করুন। ফলাফল প্রকাশিত না হলে ‘Appeared’ এবং চলমান থাকলে ‘Pursuing’ লিখতে পারেন।
প্রশিক্ষণ ও
কর্মশালাঃ ছাত্রজীবনে অর্জিত প্রশিক্ষণ ও
কর্মশালার অভিজ্ঞতা চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগে। পদের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বা
কর্মশালার নাম, বিষয়, সময়কাল এবং আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম লিখুন।
রেফারেন্স
দেওয়াঃ সিভিতে দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির
রেফারেন্স দিন। একজন একাডেমিক ও একজন পেশাজীবী হতে পারেন। তাঁরা যেন আপনার পরিচিত
হন এবং ইতিবাচক ফিডব্যাক দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন।
অঙ্গীকারনামা
যুক্ত করাঃ সিভির সব তথ্য সঠিক, তা নিশ্চিত
করতে অঙ্গীকারনামা দিন। সবশেষে নিজের স্বাক্ষর যুক্ত করুন। এসব কৌশল অনুসরণ করে
একটি নিখুঁত সিভি তৈরি করুন।
একটি ভালো সিভি মানে
শুধুমাত্র তথ্যের সঠিক উপস্থাপনাই নয়, বরং এটি হলো একজন প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা এবং
আগ্রহের প্রতিফলন। সঠিক কৌশলের মাধ্যমে একটি নিখুঁত সিভি তৈরি করে নিজেকে এক ধাপ
এগিয়ে রাখা সম্ভব। নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ এবং কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পাওয়ার
ক্ষেত্রে একটি দক্ষ এবং পেশাদার সিভি হতে পারে আপনার শক্তিশালী হাতিয়ার।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন:
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স)
মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,
ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment