টাইম ম্যানেজমেন্ট কেন একজন ব্যক্তির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?
টাইম ম্যানেজমেন্ট কেন একজন ব্যক্তির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?
সময় ব্যবস্থাপনা হলো একটি
পরিকল্পনা প্রক্রিয়া, যা দিয়ে ঠিক করা হয় কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে কতটুকু সময় ব্যয়
করার উচিৎ। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অল্প সময়ে বেশি কাজ করতে
পারেন এবং কম মানসিক চাপে ক্যারিয়ারের উন্নতির পথে হাঁটতে পারে। সময় হলো জীবনের
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটি একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। একজন ব্যক্তির
পেশাগত ও ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকারিতা, উৎপাদনশীলতা এবং মানসিক সুস্থতার ওপর গভীর
প্রভাব ফেলে।
সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে
পারলে কাজ দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা যায়। এতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়ানো সম্ভব
হয়। সময়মতো কাজ শেষ করার অভ্যাস চাপ ও দুশ্চিন্তা কমায়। পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে
উদ্বেগের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পায়। সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি কোন কাজ আগে
করবেন এবং কোনটি পরে করবেন তা নির্ধারণ করতে পারেন। এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ
হয়। সময়মতো কাজ শেষ করতে পারলে পরিবার ও নিজের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যায়। এর
ফলে জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে।সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার মাধ্যমে আপনি
নতুন সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।
কিছু কার্যকর টাইম ম্যানেজমেন্ট কৌশলঃ প্রতিদিনের কাজগুলোর
একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং প্রাধান্য অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করুন। দিনের শুরুতে
সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো শেষ করুন, যখন আপনার শক্তি এবং মনোযোগ সর্বোচ্চ থাকে। প্রতিটি
কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন এবং তা মেনে চলুন। অপ্রয়োজনীয় সামাজিক
মাধ্যম বা স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন। বিরতি নেওয়া আপনার কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
টাইম-ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করলে সময় ব্যবস্থাপনার কাজটা সহজ হয়ে যায়। এর
মধ্যে কিছু কিছু টুল আপনার ফোনে বিল্ট-ইন অবস্থাতেই আছে। এর পাশাপাশি আপনি আপনার
স্মার্টফোনে Toggl,
Harvest বা যেকোনো ডিজিটাল স্টপওয়াচ ইনস্টল করে নিতে পারেন। এতে করে
কোন কাজ করতে আপনার ঠিক কতটা সময় লাগছে তা ট্র্যাক করতে পারবেন। সপ্তাহ শেষে নিজেই
বুঝতে পারবেন আপনার সময় ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত।
আপনি যদি সব কাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে চান, তাহলে সবকিছুর সময় নির্ধারণ
করা কঠিন হতে পারে। আপনার দিনের সবকিছু নির্ধারণ করা আপনাকে আরও প্রোডাকটিভ হতে
সহায়তা করে। আপনি সব কাজের শিডিউল আগেই সেট করে রাখতে পারেন। যেমন ই-মেইল চেক করা,
মাসিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা বা দুপুরের খাবার খাওয়া। আপনি এমন সময়
নির্ধারণ করতে পারেন, যেখানে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে বিরক্ত
না করে। এ সময়টি ব্যবহার করুন কৌশল তৈরি করতে, আপনার পরবর্তী
ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করুন বা কেবল কাগজপত্র ঠিক রাখুন।
নিজের কাজ নিয়ে চিন্তা করার জন্য, ধারণাগুলোকে সংগঠিত করার এবং অন্যের চাহিদা
থেকে বিরতি নেওয়ার জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন। আপনি যখন সবকিছু নির্ধারণ করেন, তখন আপনি সেই চাহিদাগুলোর চারপাশে পরিকল্পনা করার জন্য আরও প্রস্তুত হন।
আপনি কখন সহকর্মী, ক্লায়েন্ট ও আপনার দলের সঙ্গে দেখা করতে
পারবেন, সে-সম্পর্কে আপনার আরও ভালো ধারণা থাকবে। সঠিক সময়
ব্যবস্থাপনা অনেকের কাছে ইচ্ছাপূরণের মতো মনে হতে পারে। সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা
আয়ত্তে আনতে পারলে তা অবশ্যই আপনাকে আরও সংগঠিত, প্রতিক্রিয়াশীল
ও চিন্তাশীল নেতা হতে সাহায্য করবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট কেবল একটি
দক্ষতা নয়, এটি একটি জীবনধারা। এটি আমাদের জীবনের গতি, কার্যকারিতা এবং মান উন্নত
করে। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য
অর্জন করতে পারি। এজন্য সময়ের প্রতি সচেতন হওয়া এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনটি
লিখেছেন:
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ
শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স) মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,
ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment