Header Ads

“শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, একটি সেবাধর্ম”

“শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, একটি সেবাধর্ম”

 

Teaching is the Novel Profession অর্থাৎ শিক্ষকতা একটি মহান সম্মানজনক পেশা। পৃথিবীর সব দেশেই এ পেশায় যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানী এব শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশেও শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত সম্মান করা হয়। তাদেরকে যথেষ্ট মর্যাদা দেয়া হয়। কাজেই শিক্ষক হিসেবে নিজে নিজের মর্যাদা ও সম্মানবোধ ধরে রাখা ব্যক্তি শিক্ষকের একান্তই নৈতিক দায়িত্বভুক্ত। এ পেশায় থেকে অসম্মানজনক কাজ করা যায় না।

শিক্ষক সমাজের কারিগর। সমাজ বিনির্মাণে তার ভূমিকা অপরিসীম। সমাজ উন্নয়ন, প্রগতিশীলর এবং সমাজের নেতৃত্বদানের জন্য পরবর্তী সুনাগরিক তৈরি করেন শিক্ষক। তিনি সমাজের আলোকবর্তিকা। তাই বলা হয় শিক্ষক সমাজের আলোকিত মানুষ। তিনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। এ পেশায় যশ আছে, খ্যাতি আছে, সম্মান আছে, আছে আত্মতৃপ্তি। এ পেশার মধ্য দিয়েই পরবর্তী প্রজন্ম মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। সুতরাং সুনাগরিক তৈরির পেশা তথা শিক্ষকতা অবশ্যই মহান এবং সম্মানজনক। একে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। “শিক্ষকতা একটি মহান পেশা অথবা শিক্ষকতা একটি মহান এবং সম্মানজনক পেশা" এর স্বপক্ষে কতিপয় যুক্তিপূর্ণ চেতনা নিচে সংযোজন করা হল-

শিক্ষক সমাজের শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তি, তাঁর পেশা সমাজের সবচেয়ে বেশি সম্মানের, শিক্ষক সমাজে মানুষের বাচ্চাকে মানুষরূপে তৈরি করেন, শিক্ষক সমাজের জন্য দক্ষ ও জ্ঞানগর্ভ সুনাগরিক তৈরি করেন, শিক্ষক পরবর্তী সমাজের পরিচালক তৈরি করেন, শিক্ষক সমাজ সংস্কার করে অন্ধকার দূর করেন, শিক্ষক সমাজে আলোর প্রতিফলন ঘটান।

শিক্ষকতা একটি মহান এবং সম্মানজনক পেশা। এটি আর বলা বা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না। সমাজের প্রজ্ঞাধারী শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিরাই এ পেশায় নিয়োজিত হন। আধুনিক বিশ্বের কতিপয় শিক্ষা দার্শনিক এবং পরহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, “শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, একটি সেবাধর্ম” এর তাৎপর্যের কয়েকটি দিক নিচে উল্লেখ করা হল- শিক্ষকতা সমাজের অন্যান্য পেশার মতো নয়, শিক্ষকতা সাধারণ পেশাভুক্ত নয়; বিশেষায়িত শিক্ষকতা পেশায় অতিরিক্ত প্রাপ্তির (অর্থ) সুযোগ নেই। এখানে উৎকোচ বা অবৈধ ইনকামের সুযোগ নেই৷ এখানে আর্থিক বিষয়টি বড় নয়; দায়িত্বই বড়। পরহিত ব্রত নিয়েই শিক্ষকতায় পদার্পণ করতে হয়। পরকল্যাণ এবং পর সেবাই এখানে মুখ্য বিষয়। পূর্বে শিক্ষকতা পেশায় আসতেন ধর্মবিদ্যা, পুরোহিতবৃন্দ। তারা জ্ঞানের আধাররূপে জনসেবা করে যেতেন। মানুষকে জ্ঞান চর্চার সুযোগ দিয়ে জনসেবা করতেন। আধুনিক শিক্ষকও নিজের জ্ঞান অন্যকে বিকশিত করে একাগ্রচিত্রে জনসেবা করে চলেছেন। প্রগতিশীল শিক্ষক, ব্যক্তিত্ববান শিক্ষক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়োজিত করে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ করে সার্বিক জনসেবার কাজ চালিয়ে চলছেন।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা, যা মানব সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি শুধুমাত্র জীবিকার মাধ্যম নয়, বরং একটি সেবাধর্ম যা জাতি গঠনে অমূল্য ভূমিকা রাখে। শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত, কারণ তাদের হাত ধরেই আগামী প্রজন্মের সঠিক দিকনির্দেশনা ও নৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়।

শিক্ষকের ভূমিকাঃ একজন শিক্ষক শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক শেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না; তিনি ছাত্রদের জীবন গঠনে, মূল্যবোধ স্থাপনে এবং আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ও আধুনিকতায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এ সময় একজন শিক্ষকের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ তিনি কেবলমাত্র জ্ঞান দানের মাধ্যমে নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমেও তাদের পাশে থাকেন।

সেবাধর্মের দৃষ্টিকোণঃ শিক্ষকতা পেশা হলেও, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য সমাজ সেবা। একজন শিক্ষক তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনে আলো ছড়ান। তিনি একজন চিকিৎসকের মতো, যিনি মনের রোগ সারান; একজন প্রকৌশলীর মতো, যিনি মনের ভিত গড়েন; এবং একজন শিল্পীর মতো, যিনি মনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন।

সমাজ ও শিক্ষকের সম্পর্কঃ সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষকের অবদান অপরিসীম। একটি দেশের উন্নতি নির্ভর করে তার নাগরিকদের দক্ষতা ও শিক্ষার মানের ওপর। শিক্ষকের দায়িত্ব হল নতুন প্রজন্মকে সেই দক্ষতা অর্জনের পথে পরিচালিত করা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বীজ বপন করে তারা একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখেন।

বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জঃ বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের কাজ আগের চেয়ে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং শিক্ষার্থীদের নানাবিধ মানসিক চাপের কারণে তাদের দায়িত্ব বহুগুণ বেড়েছে। তবুও, তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, কারণ তাদের কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং সেবার মানসিকতা তাদের চালিত করে।

শিক্ষকতা নিছক একটি পেশা নয়, এটি জাতি গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি এমন একটি সেবাধর্ম যা সমাজকে আলোকিত করে। তাই, আমাদের উচিত শিক্ষকদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা। কারণ শিক্ষকই সেই আলো, যিনি অন্ধকারকে দূর করে ভবিষ্যতের পথ দেখান।

সুতরাং শিক্ষকতা কেবল পেশা নয় এটি সেবাব্রত বা সেবাধর্মী। এতে মানুষের সেবার মনোভাব নিয়েই প্রবেশ করতে হয়৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন:

লেখকগবেষক ও স্কাউটারমোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষকবায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্সমাস্টার্স) মাদরাসা

মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,

ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com

 

 

 

No comments

Powered by Blogger.