যে কাজ এগিয়ে দেবে সাফল্যের পথে
যে
কাজ এগিয়ে দেবে সাফল্যের পথে
সফল হওয়ার জন্য শুধু পড়াশোনায় ভালো হলেই চলবে না। ক্লাসরুমের বাইরেও রয়েছে এক বিস্তৃত জ্ঞানের জগৎ। শিখতে হবে সেখান থেকেও। সেখান থেকে গ্রহণ করতে হবে জীবনের পাঠ। বাস্তব জীবনের এই কাজগুলোই জীবনে সফলতার পথে এগিয়ে দেয়। কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিরা আলাদা সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে থাকেন। নিজের পরিশ্রম ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে অন্যদের কাছে হয়ে ওঠেন অনুকরণীয়। তবে তাঁদের সফলতার পেছনেও থাকে অনেক গল্প। নিজেদের সফল করতে, অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে তাঁরা নিজেদের প্রস্তুত করেন দৃঢ়ভাবে। গ্রহণ করেন বিশেষ কিছু কৌশল। তাই সাফল্যের কাছে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো বিশেষ কৌশল খুঁজে বের করে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করা।
জীবনের লক্ষ্য
জানাঃ আপনার জীবনের
বা কাজের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। লক্ষ্য ছাড়া সাফল্য অর্জন করা কঠিন।
লক্ষ্য স্পষ্ট হলে কাজের গতি এবং দিকনির্দেশনা ঠিক রাখা সহজ হয়।
সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হনঃ সময় হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। প্রতিদিনের কাজের জন্য
সময় পরিকল্পনা করুন। কোন কাজটি আগে করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন এবং সময়মতো তা
শেষ করুন।
ধৈর্য এবং অধ্যবসায় বজায় রাখুনঃ সাফল্যের পথে ধৈর্য এবং অধ্যবসায় সবচেয়ে বড় গুণ।
ব্যর্থতা এলেও তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার চেষ্টা করতে হবে।
ইতিবাচক মানসিকতা রাখুনঃ আপনার চিন্তাভাবনা এবং মানসিকতার উপর সাফল্য নির্ভর করে।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক থেকে সমাধান খুঁজুন।
নিয়মিত আত্মমূল্যায়ন করুনঃ আপনার কাজ এবং অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করুন। কোন
দিকগুলোতে উন্নতির প্রয়োজন তা চিহ্নিত করুন এবং তা সংশোধন করুন।
দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিন: সাফল্য লাভের জন্য পুঁথিজ্ঞান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন
বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতা। আগে পেশাজীবীরা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে কোনো পেশায়
প্রবেশ করে তারপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই কাজ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতেন। বর্তমানে
যে কোনো চাকরির সাক্ষাৎকারে ‘অভিজ্ঞতা’ আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। তাই
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়েও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে
হবে শিক্ষার্থী জীবনেই। বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, এক্সেল, ওয়ার্ড প্রোগ্রাম
ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে চাকরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া সহজ হয়।
সহশিক্ষা কার্যক্রম: স্কুলে বা স্কুলের বাইরে যেসব সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন-
গান, আবৃত্তি, নাচ, বিতর্ক, কুইজ, খেলাধুলা, বিভিন্ন অলিম্পিয়াড বা প্রতিযোগিতা
আয়োজিত হয় সেগুলোতে অংশ নিন। আপনার মেধাকে বিকশিত করতে এগুলো বিশেষ সহায়ক। শুধু
তাই নয়, সমাজের আর দশজনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আপনি অর্জন করতে পারবেন। এর ফলে, যা
পেশাগত জীবনে সাফল্যের পথে আপনাকে অনেকটুকু এগিয়ে দেবে।
নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করুন: জীবনে চলার পথে সমস্যা আসবেই। এই সমস্যাগুলো নিজেই
সমাধানের চেষ্টা করুন। সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তাশক্তিকে নানাভাবে কাজে লাগাতে
হয়। সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হয়। এর ফলে মেধার বিকাশ ঘটে। নিজের সমস্যা নিজেই
সমাধান করা হলো প্রাপ্তবয়স্কতার অন্যতম লক্ষণ। সমস্যার সমাধানের মাধ্যমেই একজন
মানুষ সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করো।
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করুনঃ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তা রক্ষা করা একটি বড়
গুণ। এটি মানুষের প্রভাববলয়কে বিস্তৃত করে। সফলতা লাভের সহায়তা করে। তাই মানুষের
সঙ্গে পরিচিত হোন। যোগাযোগ রক্ষা করে চলুন। সবার সঙ্গে যথাসম্ভব সদ্ভাব বজায় রাখুন।
পরিকল্পনা করুন এবং তা অনুসরণ করুনঃ একটি সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কাজের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে তার জন্য ধাপে ধাপে পরিকল্পনা তৈরি করুন।
স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার যত্ন নিনঃ শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সাফল্যের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত
করুন।
দীর্ঘমেয়াদি পেশা
বেছে নিনঃ সচেতনতা ব্যক্তিগত উন্নতির একটি
অপরিহার্য চাবিকাঠি। আপনার অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা, আপনার শক্তি, আপনার আকাঙ্ক্ষা এবং আপনার অসুবিধাগুলো
সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে, আপনি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে
যাচ্ছেন, তার সঙ্গে আপনি আপনার জীবনকে মানিয়ে নিতে পারেন।
এতে আপনি অনেক সুবিধাও পাবেন। নিজের সম্পর্কে যা জানেন, সেই
অনুসারে যদি দীর্ঘমেয়াদি পেশা বেছে নেন, তবে এটি আরও ভালো।
এমন একটি কর্মজীবনের পথ বেছে নেওয়া উচিত, যা আপনার বৈশিষ্ট্য
এবং গুণাবলি সুবিধা দেয়।
দায়িত্ব নিতে
প্রস্তুত থাকুনঃ সফল পেশাদারদের সঙ্গে অন্যদের
মূল পার্থক্য দায়িত্ববোধের জায়গায়। অনেক সময় এমন হয় কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে আপনি
জানেন, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রয়োগ করতে
পারেন না। ফলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। যখনই এমন কিছু ঘটবে, তখন তা আপনাকে মেনে নিতে হবে। আপনার সব কর্মের জন্য দায়বদ্ধতা গ্রহণ করতে
হবে। ভুলের জন্য কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।
সর্বদা নিজের
মান বাড়ানঃ মানুষ তাঁর চিন্তাভাবনা,
বিশ্বাস ও আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যদি আপনার মান উচ্চ হয়, তবে আপনি যা করতে পারবেন তার চেয়ে কম নিয়ে আপনি কখনোই সন্তুষ্ট হবেন না।
উচ্চমানসম্পন্ন লোকেরা সাধারণের তুলনায় বেশি সফল হয়। তাই সব সময় নিজেকে একটু একটু
করে উন্নত করার চেষ্টা করুন।
নিজস্ব
নেটওয়ার্কিং তৈরি করুনঃ সফল ব্যক্তিরা
সর্বদা নেটওয়ার্কিং করেন এবং লাভজনক সম্পর্ক তৈরি করেন। LinkedIn, Twitter
ও Facebook-এর মতো সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করুন। যার মাধ্যমে অনেক দক্ষ মানুষের
সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। মূলকথা, একটি সফল ক্যারিয়ার
গড়তে সময়, প্রচেষ্টা ও ধৈর্য লাগে। আপনি যদি কিছু অবসর ত্যাগ
করে নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন, তবেই সফলতা
ধরা দেবে আপনার হাতে।
কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং উৎসর্গ করুনঃ যে কাজ আপনি করছেন, তা ভালোবাসতে হবে। কাজের প্রতি আপনার
উৎসর্গ এবং উদ্যমই আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে।
সাফল্য অর্জন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম, এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আপনি সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। লক্ষ্য স্থির রেখে প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যান।
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স)
মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭,
ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment