হ্যান্ডনোট তৈরি করার কৌশল
হ্যান্ডনোট তৈরি করার কৌশল
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য গোছানো হ্যান্ডনোট তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করে না, বরং সঠিকভাবে বিষয়বস্তু বুঝতেও সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করে হ্যান্ডনোটকে আরও উন্নত এবং গোছানো করা সম্ভব।একটি গোছানো হ্যান্ডনোট আপনার যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। ভালো প্রস্তুতি এবং কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে নিজের করা হ্যান্ডনোটের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য সংগ্রহ করুনঃ বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। যেমন: বই, পত্রিকা, ওয়েবসাইট বা
গবেষণাপত্র। প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো চিহ্নিত করে আলাদা নোট তৈরি করুন।
স্পষ্ট এবং পরিষ্কার শিরোনাম ব্যবহার: হ্যান্ডনোটে প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি স্পষ্ট এবং
পরিষ্কার শিরোনাম ব্যবহার করুন। এতে প্রতিটি বিষয় সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে এবং পড়তে
সুবিধা হবে।
বিষয়বস্তু সাজানঃ তথ্যগুলো সহজবোধ্য এবং প্রাসঙ্গিকভাবে সাজাতে হবে। ১। শিরোনাম:
প্রতিটি বিভাগে আকর্ষণীয় ও সরল শিরোনাম ব্যবহার করুন। ২। সাব-হেডিং: মূল
বিষয়কে ভাগ করে সাব-হেডিং যুক্ত করুন। ৩। পয়েন্ট আকারে তথ্য: বড় বড় বাক্যের
পরিবর্তে পয়েন্ট আকারে সহজভাবে লেখার চেষ্টা করুন।
বুলেট পয়েন্ট এবং নম্বরিং ব্যবহার: প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বুলেট পয়েন্ট বা নম্বরিং করে আলাদা করুন। এতে তথ্যগুলো
পড়তে ও মনে রাখতে সুবিধা হবে।
সংক্ষিপ্ত এবং নির্ভুল লেখা: লেখার সময় সংক্ষিপ্ত এবং নির্ভুল তথ্য লিখুন। অতিরিক্ত তথ্য বাদ দিয়ে মূল
পয়েন্টগুলো আলাদা করুন।
রঙিন হাইলাইটার ব্যবহার: গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হাইলাইট করতে বিভিন্ন রঙের হাইলাইটার ব্যবহার করুন।
এটি তথ্যগুলো চোখে পড়ার মতো করে তোলে এবং মনে রাখতে সহায়ক হয়।
চিত্র ও ডায়াগ্রাম অন্তর্ভুক্ত করা: যেখানে সম্ভব, চিত্র বা ডায়াগ্রাম অন্তর্ভুক্ত করুন।
এটি জটিল বিষয়গুলো সহজে বুঝতে এবং মনে রাখতে সহায়ক।
পড়ুন একাধিক বইঃ যে বিষয়টি নোট করবেন, সেই বিষয়ে পড়ুন
একাধিক বই। একাধিক বই পড়ার ফলে আপনার জ্ঞান এবং তথ্য সমৃদ্ধ হবে। বিভিন্ন বইয়ের
সংযোজনে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারবেন। একটি বইয়ে হয়তো প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেওয়া নেই
বা এমন অনেক তথ্য দেওয়া রয়েছে, যার সব প্রয়োজন নেই।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিয়ে নোট তৈরি করলে পরীক্ষার আগে পড়ার অথৈ সাগরে ডুবে যেতে
হবে না। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সম্মিলনে বিষয়ভিত্তিক নোট আপনার প্রস্তুতি শাণিত
করবে। যে বিষয়ে নোট করবেন, সেই বিষয়ে প্রথমে বিভিন্ন বই
থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করুন। মন দিন শিক্ষকের লেকচারে ক্লাসে শিক্ষকের লেকচার মন দিয়ে
শুনবেন। স্যার কী বলছেন, পড়াচ্ছেন, ছোট
করে টুকে নেবেন। ক্লাসে ঢুকে নেওয়া লাইনগুলো বাসায় এসে গুছিয়ে লিখে ফেলবেন।
শিক্ষকের কথা শোনা এবং লেখার মাধ্যমে আপনার স্মৃতিতে বিষয় সম্পর্কে ধারণা মজবুত
হবে। সেই সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলাদা নোট খাতা বানাবেন। এক খাতায় সব লিখবেন না। আলাদা
করে এ-ফোর কাগজে শিট আকারে নোট বানালে তা সহজেই খুঁজে পাবেন।
কাজে লাগান মোবাইল ফোনঃ তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে পুরো দুনিয়া
এখন হাতের মুঠোয়। এমন কোনো তথ্য নেই, যা ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না। কোনো বিষয়ে
নোট করার প্রয়োজন হয়েছে, আর সেই বিষয়ে হয়তো আপনার কাছে কোনো
বই নেই! চিন্তা নেই, ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
গুগলে সার্চ করুন। বিভিন্ন আর্টিকেল পাবেন, পড়ুন। স্কুল,
কলেজ, ভর্তি পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যয়নরত কিংবা চাকরির প্রস্তুতি আপনি যে শিক্ষার্থীই হোন না কেন, ফেসবুকে রয়েছে শিক্ষামূলক নানা গ্রুপ। এসব গ্রুপে যুক্ত থাকতে পারেন।
যেখানে পাবেন পিডিএফ, নোট বা বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির তথ্য। এ
ছাড়া টপিকের নাম লিখে সার্চ করলে ইউটিউবে অসংখ্য শিক্ষামূলক ভিডিও পাবেন, পাবেন টিউটোরিয়াল ক্লাস; অর্থাৎ মোবাইল ফোনের
সহযোগিতা নিলে আপনার নোট তৈরির পথ অর্ধেক সহজ হয়ে যাবে।
নিজের মতো করে ভাবুনঃ যে বিষয়ে লিখছেন, সেই বিষয়ে নিজের
মতো করে ভাবুন। দুর্বোধ্য লাগলে তা বারবার আয়ত্ত করুন। নিজস্ব চিন্তাশীলতা ও
সৃজনশীল জ্ঞান দ্বারা লেখাটিকে সমৃদ্ধ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করুন। কঠিন ভাষার কোনো
সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা বুঝতে না পারলে সহজ করে লিখুন। নিজের
ভাবনার জগৎকে কাজে লাগালে সুন্দর নোট তৈরির পাশাপাশি বিষয়টিও আপনার মগজে গেঁথে
থাকবে।
একঝলকে পুরো বিষয় হ্যান্ডনোটের একটি বিশেষ সুবিধা
হলো, একঝলকেই
পুরো বিষয় সহজে বুঝতে পারা যায়। অনেক সময় এমন হয়, একটি বিষয়
পড়তে গিয়ে কয়েকটি বইয়ের খোঁজ করতে হচ্ছে। এতে পড়ার সময় এবং আগ্রহ দুটোই বিপন্ন হয়।
সাজিয়ে- গুছিয়ে নোট তৈরি করলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। আপনার পরীক্ষা চলে এসেছে।
হাতে বেশি সময় নেই, এমন সময় হাতের কাছে নোট তৈরি থাকলে
সুন্দরভাবে রিভিশন দিতে পারবেন। নোট করার সময় সুন্দর করে প্রথমেই একটি শিরোনাম
দিন। প্যারা বা পয়েন্ট করে লিখুন। পয়েন্ট করার জন্য বুলেট, ফ্রেম
বিভিন্ন সাইন ব্যবহার করুন। হাতের লেখা স্পষ্ট করে লিখুন। যেন আপনি একঝলকেই পুরো
বিষয় বুঝতে পারেন। মনে রাখবেন, ভালো রিভিশন পরীক্ষায় ভালো ফল
অর্জনের পূর্বশর্ত। নিজের তৈরি নোট পড়লে পরীক্ষার আগে আপনার স্মৃতি নতুনরূপে শাণিত
হবে।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন:
লেখক, গবেষক ও স্কাউটার—মোহাম্মদ
সাইফুদ্দিন
শিক্ষক—বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স)
মাদরাসা
মোবাইলঃ ০১৮১৯৯৪৭৩৮৭, ই-মেইলঃsaifuddinbaitushsharaf@gmail.com
No comments
Post a Comment