কঠিন বিষয়কে সহজে মনে রাখার কৌশল
কঠিন
বিষয়কে সহজে মনে রাখার কৌশল
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে অনেক কঠিন বিষয় মুখস্থ করতে হয়। তাছাড়া প্রফেশনাল লাইফেও কিছু বিষয় রয়েছে যা মনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো বিষয়ে দুর্বল থাকে। সে বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে প্রয়োজন হয় বাড়তি মনোযোগ, অতিরিক্ত শ্রম। কিছু সহজ কৌশলের মাধ্যমে কঠিন বিষয়গুলোকেও আয়ত্ত করা যায় সহজে।
বিষয়টিকে ছোট
ছোট অংশে ভাগ করুন: বড়
বা জটিল বিষয়কে ছোট ছোট টুকরোতে ভাগ করে নিন। এতে বিষয়টি সহজে বোঝা যায় এবং মনে
রাখা যায়। বড় বড় প্যারাগ্রাফের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করুন।
পয়েন্ট আকারে তথ্য লিখলে পড়তে ও মনে রাখতে সুবিধা হয়।
ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা ছবি কল্পনা করুন:
তথ্যের সাথে ছবি,
চিত্র বা গল্প কল্পনা করলে মনে রাখা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো তথ্যকে মানসচিত্রে (mind map) সাজাতে পারেন।
মেমোরি প্যালেস পদ্ধতি ব্যবহার করুন:
পরিচিত কোনো জায়গার সাথে তথ্যগুলোর
সংযোগ স্থাপন করুন। যেমন, আপনার ঘরের কোণে কোনো
তথ্য কল্পনা করা।
সংগীত বা ছন্দ তৈরি করুন: তথ্যকে গান, ছড়া বা ছন্দের
মাধ্যমে মনে রাখার চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্কে তথ্য ধরে রাখার প্রক্রিয়া
ত্বরান্বিত করে।
এসোশিয়েশন তৈরি করুন: নতুন তথ্যকে কোনো পরিচিত বিষয় বা অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে সংযোগ
তৈরি করুন।
রিপিটেশন (পুনরাবৃত্তি): বিষয়টি বারবার পড়ুন এবং নিজের মতো করে পুনরায় লিখুন। স্পেসড
রিপিটিশন (spaced repetition) প্রযুক্তি
ব্যবহার করলে আরও কার্যকর হয়।
শেখানোর চেষ্টা করুন: যা শিখেছেন তা অন্য কাউকে শেখানোর চেষ্টা করুন। এটি আপনার
জ্ঞান আরও মজবুত করে।
ফোকাস ও বিশ্রাম: একটানা না পড়ে মাঝে মাঝে বিরতি নিন। ২৫-৩০ মিনিট পড়ে ৫-১০
মিনিট বিশ্রাম নিলে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।
আবেগের সংযোগ তৈরি করুন: কোনো তথ্যের সাথে আবেগ বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জুড়ে দিন।
আবেগপূর্ণ বিষয় সহজে মনে থাকে।
অভ্যাস ও সময়: নিয়মিত অনুশীলন করুন এবং সময় দিন। বারবার চেষ্টা করলে কঠিন
বিষয়ও সহজ হয়ে যায়।
ইন্দ্রিয়গুলোকে
ব্যবহার করুন:কঠিন
পড়াগুলো শব্দ করে উচ্চারণ করে পড়ুন। শব্দ করে পড়া আর মনে মনে পড়ার মধ্যে
পার্থক্য রয়েছে। মনে মনে পড়ার সময় একটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখের মাধ্যমে তথ্য পায়
মস্তিষ্ক। অপরদিকে শব্দ করে পড়ার মাধ্যমে চোখের সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণেন্দ্রিয় বা কান
দ্বারাও মস্তিষ্ক তথ্য পেয়ে থাকে। এর ফলে তথ্যটি আরও ভালোভাবে মস্তিষ্কে স্থান করে
নেয়। তবে শুধু শব্দ করে পড়লেই হবে না। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যে অংশটি
বুঝতে পারবেন না, সেটি বারবার পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন। বুঝতে না পারলে
বিষয়টি মনে রাখা কঠিন হয়ে যায়।
পড়ার সঙ্গে
সঙ্গে লিখে অভ্যাস করুন: কঠিন বিষয় লিখে লিখে পড়া একটি ভালো অভ্যাস। এর ফলে অল্পসময়ে
বিষয়টি আয়ত্তে আসে। যখন মনে করবেন বিষয়টি আয়ত্তে এসেছে তখন সম্পূর্ণ অংশ আবার না
দেখে লেখুন। এবার নিজেই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করুন। ভুলত্রুটি বের
করুন। প্রয়োজনে আরও একবার পড়ে পুনরায় লেখুন।
নিজের সময়
খুঁজে বের করুন: প্রতিটি
মানুষ স্বতন্ত্রসত্তার অধিকারী। কারও মস্তিষ্ক সকালে ভালো কাজ করে, আবার কারও হয়তো
গভীর রাতে। আপনার সময় কোনটা সেটা খুঁজে বের করুন। কঠিন বিষয়টি সে
সময়ে পড়ুন। দেখবেন সহজে আয়ত্ত করতে পারছেন। এর জন্য
বিভিন্ন সময়ে পড়তে বসে নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে কোন সময়ে আপনার মস্তিষ্ক সবচেয়ে
ভালো কাজ করে।
মস্তিষ্ককে
বিশ্রাম দিন: একটা
কিছু জানার পর মস্তিষ্কের সময় প্রয়োজন হয় সেই তথ্যগুলো গুছিয়ে সংরক্ষণ করতে মূলত
বিশ্রাম বা ঘুমের সময়ে মস্তিষ্ক এই কাজটি করে। মস্তিষ্কের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম
তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই পরীক্ষা এলে নাওয়া-খাওয়া ঘুম বাদ
দিয়ে পড়তে শুরু করে। এতে লাভের থেকে ক্ষতিই হয় বেশি। মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ
কার্যকারিতার জন্য পরিমিত ঘুমান, মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন।
নিজেকে
অনুপ্রাণিত করুন: নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যে পড়া আয়ত্ত করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। হয়তো এক কাপ চা
খেলেন। তেমনি নির্দিষ্ট সময়ে পড়া না করতে পারলে শাস্তির ব্যবস্থাও
করতে হবে। যেমন- পড়াটি শেষ না করে টেবিল থেকে উঠবেন না। নিজেকে অনুপ্রাণিত করার
জন্য এসব উদ্যোগ খুবই ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।
বিভিন্ন উপস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহার করা: প্রতিদিন পড়র পাশাপাশি, শুনে এবং দেখে পড়ুন। অডিও বা
ভিডিও লেকচার থেকে শোনা বা বিভিন্ন চিত্র ও ডায়াগ্রামের মাধ্যমে দেখা, স্মৃতির
ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
সম্পর্কিত উদাহরণ ব্যবহার করা: যেকোনো কঠিন বিষয়ের সাথে বাস্তব জীবনের উদাহরণ সম্পর্কিত করুন। উদাহরণের
মাধ্যমে বিষয়টি সহজে মনে রাখা যায়।
পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন
একটি নিরিবিলি ও মনোযোগী পরিবেশে
পড়াশোনা করুন। গুছানো পরিবেশ মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।
মনে রাখা প্রয়োজন, মনে রাখার
দক্ষতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। ধৈর্য ধরে নিয়মিত চর্চা করলে কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যাবে।
কঠিন বিষয়গুলি মনে রাখা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে,
কিন্তু সঠিক কৌশল ও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তা সহজ হতে পারে। উপরে উল্লেখিত
কৌশলগুলো অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা ও পেশাদাররা তাদের কঠিন বিষয়গুলি সহজেই মনে
রাখতে সক্ষম হবেন।
শিক্ষক—বায়তুশ
শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স—মাস্টার্স) মাদরাসা
No comments
Post a Comment